Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৪ নভেম্বর ২০১৬

সাভার অঞ্চলের তামা-কাঁসার-পিতলের শিল্পকর্ম

চারু ও কারুশিল্প বাংলার ইতিহাসে নন্দনতাত্ত্বিক বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার ময়নামতি এবং অতিসম্প্রতি ২০০১ সাল থেকে নরসিংদী জেলার উয়ারি বটেশ্বরীর খননকার্য এই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ৫০০অব্দ থেকে জনপদের প্রাচীন বঙ্গের অধিবাসীগণ মৃৎশিল্প, লৌহ নির্মিত হাতিয়ার, কাঠের তৈরি বস্থুসামগ্রী, নানা প্রকার কৃষিসামগ্রী, ধর্মীয় ও গৃহকার্যের সামগ্রী প্রস্তুত করত। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে যে কোন ধরণের সংস্কৃতির পরিক্ষা-নিরীক্ষায় জনসাধারণের তৈরিকৃত চারু ও কারুশিল্পের মূল বিষয় জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান, তাদের আধ্যাত্মিক ও বৌদ্বিক বিকাশ এবং সামাজিক মূল্যবোধের মূল মানদন্ড হচ্ছে হস্তশিল্প সামগ্রী। চিরায়ত উচ্চমাত্রার শিল্পকলা বাংলার ভাস্কর্য প্রায় হাজার বছর ধরে বাংলার হিন্দু-ভাস্কার্য সৃষ্টি হয় এবং তাঁরই ধারাবাহিকতায় এসময় যে ধর্মীয় ও পাট শিল্পের/মূর্তি তত্ত্বের ধারণা উচ্চ মাত্রয় পৌছে। তামা, ব্রোঞ্জ ও পিতলের দেব দেবীর মূর্তি ও হাতে তৈরি শিল্পকর্ম ধাতু বিদ্যায় বৈদিক জ্ঞানের উত্তরাধিকার আজো বাংলার সুন্দর তাম্র নির্মিত চারু ও কারুকলায় বিদ্যমান। ধাতব শিল্পের জন্য বিখ্যাত স্থানসমূহ- রাজশাহীর চাপাই নবাব গঞ্জ, ঢাকার সন্নিকটে ধামরাই, শিমূলিয়া ও সাভার, ময়মনসিংহের ইসলাম পুর, দরিয়াবাদ ও টাঙ্গাইল। এছাড়া অন্যান্য স্থানের মধ্যে রয়েছে কাগমারি ও বাঘাইল। মন্দির ও ধর্মীয় উৎসবের জন্য নির্মিত উচ্চ নন্দন তাত্ত্বিক অলঙ্কারের মধ্যে রয়েছে পুস্প পত্র বা ফুল ও অর্চনার জন্য তাম্র নির্মিত থালা ও বোল, মন্দির-প্রদীপ, পঞ্চপ্রদীপ, নারী আকৃতির প্রদীপ, দেবতাকে জাগ্রত করার জন্য ঘন্টা এবং গরুড় হনুমান বা পাখির আকৃতি দিয়ে তৈরি হাতঘন্টা। ষাড় বা ময়ূর আকৃতির উপর স্থাপিত বা রকোষ যা মানতরক্ষার্থে নিবেদিত অর্চনা। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বিশাল আকৃতির রথকে তামা ও পিতলের বস্তু সামগ্রীদিয়ে সম্পূর্ণ রূপে সজ্জিত করা হয়। বাংলার একটি বিখ্যাত চারু ও কারু শিল্পের নিদর্শন দেখা যায় মাদুর বোনা পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্মের মধ্যে। এই পদ্ধতিতে তামা ও পিতলের তার দিয়ে ভাতের বোল, ধূপতি ও গ্রাম্য দেবতা তৈরি করা হয় যা পূজা-অর্জনার সময় পাশে রাখা হয়।

খোদাইকৃত চারু ও কারুশিল্প কালো পাথরের বিগ্রহ পূর্ব বাংলায় প্রাপ্ত এবং ১৯২০ সালে ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত পাথর, ব্রোঞ্জ ও কাদামাটি দিয়ে তৈরি বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য মূর্তিগুলোকে এনকেভট্টশালী ‘ঢাকা জাদুঘরে বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্যভাস্কর্য’ শিরোনামে প্রামান্য দলিল হিসেবে নথিবদ্ধ করেছেন। তাছাড়া তিনি রাজশাহী, লোককাতা, কুমিল্লা ও রংপুর জাদুঘরে এবং ব্যক্তিগতভাবে বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ভাস্কর্যের বিশাল সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন। শিল্পকলার ঐতিহাসিক গণবাংলার বৌদ্ধ মূর্তিগুলিকে উচ্চমানের শিল্পকর্ম হিসেবে স্বীকার করেছেন। এগুলো সূক্ষ্ম ও মসৃণ শক্ত কণা ও ‘ব্ল্যাকক্লোরাইট’ নামক শক্ত স্লেট পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে যা আর্দ্রতা রোধক ও মসৃণ খোদাইয়ের জন্য উপযুক্ত। ধাতব –খোদাইকৃত মূর্তি পূর্ব বাংলার চিরায়ত ধর্মীয় শিল্পকলার গঠন আকৃতির পাথর-ভাস্কর্যের সঙ্গে ধাতব-খোদাইকৃত মূর্তির সাদৃশ্য বিদ্যামান। এ রূপ ভাস্কর্য ধাতব সামগ্রী, তামা, দস্তা, টিনের সঙ্গে সমানুপাতিক জিঙ্ক, লৌহা ও খাদের সংমিশ্রণে তৈরি। এসব কাজে রুপর টুকরোগুলোকে খোদাই করে ব্যবহার করা হয় এবং খুব সামান্য ক্ষেত্রে স্বর্ণদন্ড ব্যবহার করা হয়। ধাতব সামগ্রী খোদাই কাজে লস্ট-ওয়াক্স পদ্ধতিতে বিস্তার লাভে করছে এবং সুনাম ও অর্জন করেছে যা পাথর-খোদাইয়ের সমমানের। ধাতব-সামগ্রীর খোদাই কাজে সুন্দর অভিব্যিক্তি ফুটিয়ে তোলার জন্য মানুষ্য আকৃতির কোমলতা অংকন করা হয়।