ইতিহাস
একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের ইতিহাসে বাঙালি ব্যতিক্রমী জাতি। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালি ঠিক করে নেয় তার সাংস্কৃতিক আত্ম-পরিচয়। স্বাধীনতার পর এটি আরো স্পষ্টত প্রতীয়মান যে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।
স্বাধীন জাতি হিসেবে বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সাংস্কৃতিক চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রমের মাধ্যেমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৯৭২ সালে ‘সংস্কৃতি ও ক্রীড়া’ বিষয়ক একটি বিভাগ গঠন করা হয়। আর তখন থেকেই দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশে এ বিভাগ কাজ করছে।
পরবর্তীকালে এ বিভাগকে ‘শ্রম ও কল্যাণ’ মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। একই বছরে এ বিভাগকে পুনরায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৮ সালে এ বিভাগকে ‘ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ হিসেবে নামকরণ করা হয়।
১৯৭৯ সালে এ মন্ত্রণালয়ে ধর্ম বিষয়কে সম্পৃক্ত করে ‘ধর্ম, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করা হয়।
১৯৮০ সালে এ মন্ত্রণালয়কে বিভাজন করে দু’টি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় - ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় ।
১৯৮২ সালে প্রশাসনিক নীতি পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে এ মন্ত্রণালয়কে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ‘ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিভাগ’এ রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৮৩ সালে এ বিভাগকে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। একই বছরে ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ক্রীড়া বিষয়ক কার্যাবলিকে পৃথক করে ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়’ নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয় সৃজন করা হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক কার্যাবলিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।
বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি পূর্নাঙ্গ মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করছে । এ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কাজ করছেন জনাব খলিল আহমদ।
কার্যাবলি
১. জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, চারু-কারু ও ললিত কলার সংরক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়ন।
২. প্রত্নতত্ত্ব, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।
৩. জাতীয় গ্রন্থাগার/গণগ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও প্রবর্ধন।
৪. জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলার প্রচলনে সহায়তা/সহযোগিতা।
৫. প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌধাদি( Monument) বিশেষ করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘোষিত সৌধাদির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ।
৬. একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস উদ্যাপন।
৭. একুশে ফেব্রুয়ারি পুরস্কার (একুশে পদক) প্রদান।
৮. সংস্কৃতিসেবী সংগঠনের জন্য গ্রান্টস ইন এইড প্রদান।
৯. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অঙ্গনে কার্যরত আন্তর্জাতিক সংগঠন ও তাদের বিশ্বজনীন অনুষ্ঠানমালা আয়োজনে সহায়তা।
১০. জাতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং চারুকলার বিকাশ ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান।
১১. প্রাইড অব পারফরমেন্স : চারুকলা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য মেধা পুরস্কার/ পদক প্রদান।
১২. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি সম্মেলন/ সভা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ ও আয়োজন করা।
১৩. সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্র সংক্রান্ত প্রকাশনার উন্নয়ন সাধন।
১৪. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিকাশের লক্ষ্যে জাতীয় সংগঠন/সংস্থা প্রতিষ্ঠা/প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদান এবং তাদের গ্রান্ট ইন এইড প্রদান।
১৫. বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন।
১৬. বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংস্কৃতিক দল বিনিময়।
১৭. পল্লী সাহিত্য, পল্লী সংস্কৃতি ও পল্লী মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা।
১৮. সাহিত্যসেবী, শিল্পী প্রমুখদের পেনশন প্রদান।
১৯. আর্থিক বিষয়াদিসহ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন পরিচালনা।
২০. আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থাসমূহের প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ।
২১. বিদেশি রাষ্ট্র, বৈশ্বিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে এ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিয়াজো করতঃ চুক্তি প্রণয়ন।
২২. এ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রণয়ন ও মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়াদি নিষ্পত্তি।
২৩. এ মন্ত্রণালয়ের সকল বিষয়ে পরিসংখ্যান প্রণয়ন।
২৪. আদালত কর্তৃক গৃহীত ফি ব্যতিত এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়ে ফি নির্ধারণ ও আদায়।